• ঢাকা, বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:১৮ অপরাহ্ন

আদমদীঘিতে ৫ হাজার মেট্রিক টন সজনে ফলন; ২৫ কোটি টাকার সজনে রপ্তানি

আদমদীঘি প্রতিনিধি
সর্বশেষ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সজনের জন্য বিখ্যাত বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভা। প্রতিবার গ্রীষ্মকালীন সবজি হিসেবে সজনে ডাটা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয় ঢাকা সহ দেশের বিভিন জেলায়।
প্রতি মৌসুমে ৮ থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন সজনে ডাটার ফলন হয় এই উপজেলায়। তবে এবার অনুকূল আবহাওয়া না থাকায় সজনের বাম্পার ফলন হয় নাই। এবার উপজেলায় ৫ হাজার মেট্রিকটন সজনে ফলন হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২৫ কোটি টাকা।
তরকারি হিসেবে সজনের জুড়ি নাই, তাইতো এর কদর রয়েছে সর্বত্র। উপজেলার সান্তাহারে সজনে আবহাওয়ার কারণে অন্যান্য এলাকার থেকে স্বাদের হওয়াই সমগ্র দেশে এই সজনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উপজেলার বেশি ভাগ সজনের ফলন হয় সান্তাহার পৌর শহরে। পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে ও রেল লাইনের পাশ দিয়ে রয়েছে সারি সারি সজনে গাছ। রাস্তার পাশ দিয়ে এই সব গাছে ব্যাপক পরিমাণ সজনের ফলন হলে দেখে মনে হয় সজনে বাগান। তবে এবার আবহাওয়া অনূকুলে না থাকায় ও বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সজনের বাম্পার ফলন হয় নাই।
মৌসুমের শুরু দিকে প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে হাট-বাজারে এর দাম কমে এসেছে। বর্তমানে পাইকারি বাজার ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও খুচরা বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে সজনে ডাটা।
সান্তাহার পৌর শহরের নামা পৌওতা এলাকার আরমান হোসেন পলাশ নামের এক সজনে চাষী বলেন, আমার  প্রায় ২০ টি সজনে গাছ রয়েছে। যে গাছগুলো থেকে প্রতি বছর  প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার সজনে বিক্রি করতে পারি। তবে এবার সজনের ফলন কম হওয়াই ২২ হাজার টাকার সজনে বিক্রি করতে পেরেছি।
পৌর এলাকার আরেক চাষী রাকিব হোসেন বলেন, সজনে ফুল থেকে যখন সজনে ধরে সে সময় প্রতিবার বৃষ্টি হয় যার কারণে ফলন ভালো হয়। এবার বৃষ্টি না হওয়াই ফলন তেমন ভালো হয় নাই।
অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনে ডাটা পুষ্টিগুণ ও স্বাদে বেশি হওয়ায় যে কোন বয়সের মানুষ সজনে খেতে ভালবাসে। স্হানীয় পল্লী চিকিৎসক মাজেদুর রহমান বলেন, সজনে সবজিতে ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ, আয়রণ সহ প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় খাদ্য রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন এ.বি. সি সমৃদ্ধ সজনে ডাটা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
সজনে ডাটা প্রধানত দুই প্রজাতির। এর মধ্যে এক প্রজাতি বছরে তিন থেকে চার বার পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে এর নাম বলা হয় রাইখঞ্জন। অন্য প্রজাতির সজনে বছরের গ্রীষ্ম মৌসুমে একবারই পাওয়া যায়। সজনে চাষের জন্য বিশেষ কোন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয় না। এর জন্য আলাদা কোন জমিও প্রয়োজন হয় না। যে কোন পতিত জমি, পুকুর পাড়, রাস্তার বা বাঁধের ধার, বাড়ির আঙ্গিনা এমনকি শহরে যে কোন ফাঁকা শুষ্ক জায়গায় সজনে গাছ লাগানো যায়। এর কোন বীজ বা চারাও প্রয়োজন হয় না। গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রাখলেই সজনে গাছ জন্মায়। এর জন্য কোন সার বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অবহেলা অযত্নে প্রাকৃতিক ভাবেই বেড়ে উঠে সজনে গাছ। বড় ও মাঝারি ধরণের এক একটি সজনে গাছে ৬ থেকে ৮ মণ পর্যন্ত সজনে পাওয়া যায়।
বিনা খরচে অধিক আয় পাওয়ায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবেও সজনে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে এই উপজেলার মাটি, পানি ও আবহাওয়া সজনে চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এই উপজেলায় সর্বত্রই প্রচুর পরিমাণে সজনে উৎপাদন হচ্ছে।
এ বিষয়ে আদমদীঘি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারী বলেন, আদমদীঘি উপজেলা সর্বত্র সজনে চাষে উপযোগী মাটি ও আবহাওয়া রয়েছে। প্রতি বছর সজনের মৌসুমে ৮ থেকে ১০ হাজার মেট্রিকটন সজনে উৎপাদন হয় এই উপজেলায়। তবে এবার আবহাওয়ার কারণে আগের তুলনায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে। এবছর প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন সজনের ফলন হয়েছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২৫ কোটি টাকা।


আরো খবর